লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি :: একটি ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে সমাপনী বক্তব্য দিতে গিয়ে ট্রফি (কাপ) ভেঙে ফেলেন বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুবা ইসলাম,-এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র উপজেলার বিভিন্ন পেশাজীবি ও সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সর্ব সাধারণের ব্যানারে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহরুবা ইসলামের অপসারণের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করে শতশত মানুষ। শনিবার বিকেলে উপজেলা শহরের চৌমুহনী থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পুলিশের বাধার মুখে ক্যান্টিন মোড়ে গিয়ে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্যকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম বলেন. আমাদের ছোট ভাইয়েরা নিজেদের টাকায় খেলা চালিয়েছেন। সে খেলায় আমাকে প্রধান অতিথি করার কথা ছিল কিন্তু প্রধান অতিথি হিসেবে গেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, তাতে আমার দু:খ ছিলনা কিন্তু তিনি ট্রফি ভেঙ্গে দিয়ে আলীকদমবাসীকে অপমান করার পাশাপাশি ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এর আগে ইউএনও মেহরুবা ইসলাম অকারণে স্থানীয়দের পার্কিং করা দুটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করেন এবং জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে একটি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি সহ মারার জন্য স্থানীয়দের দিকে বন্দুক তাক করেন। এতে বুঝা যায় মানসিক ভারসাম্য হীন ও অদক্ষ একজন ইউএনও তিনি। ভবিষ্যতেও তিনি এলাকায় বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পারেন। তাই ২৪ ঘন্টার মধ্যে এ ইউএনও কে আলীকদম থেকে প্রত্যাহার করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীব বাহাদুর উশৈসিং এমপি সহ সংশ্লিষ্ট উধর্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে, এর চেয়েও কঠোর কর্মসূচী নেওয়া হবে বলে হুশিয়ারি বাক্য উচ্চারণ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল কালাম। এদিকে ইউএনও খেলার ট্রফি ভেেেঙ্গ আলীকদমবাসীর মনে আঘাত দিয়েছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় কবির আহমদ, মোস্তফা কামাল, নুরুল আবচার সহ অনেকে। এহেন কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত এ ইউএনও’র অপসারণের দাবীও জানান তারা।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানায়, গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের মাংতাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আবাসিক স্বাধীন যুব সমাজের উদ্যোগে আবাসিক জুনিয়র একাদশ বনাম রেপার পাড়া বাজার একাদশের ফাইনাল খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন ইউএনও মেহরুবা ইসলাম। খেলা শেষে সমাপনী বক্তব্যে উপস্থিত দর্শকদের উদ্দেশ্যে ইউএনও মেহরুবা ইসলাম বলেন, খেলার হার জিত থাকবে। এতে কারও মন খারাপের কারণ নেই। তিনি দর্শকদের কাছে খেলার ফলাফলে সন্তুষ্ট কিনা জানতে চান। এ সময় কয়েকজন খেলার ফলাফল মানি না বলাতেই ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে টেবিলে থাকা চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্সআপ ট্রফি ভেঙে ফেলেন। যা মোটেও উচিত করেননি তিনি।
তবে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহরুবা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমি ইচ্ছে করে তো ট্রফি ছুড়ে ফেলিনি। খেলোয়াড়রাই তো বলেছে ট্রফিটি যাতে আমি ভেঙে ফেলি। ট্রফি ছুড়ে ফেলার পর খেলোয়াড়দের মন খারাপ হওয়ার কথা কিন্তু উল্টো খুশিতে হাততালি দিয়েছেন তারা। ট্রফি ছুড়ে ফেলার পরও সবকিছু স্বাভাবিক ছিল। তারা সম্মানিত পদকও গ্রহণ করেছেন। যা পুরো ভিডিও দেখলে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে। কিছু মানুষ ভিডিওটার কিছু অংশ কেটে ফেসবুকে ছেড়েছে। তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে সরাতে পারলে উনার কার্য হাসিল হয়। আমি সরকারের একজন প্রতিনিধি হিসেবে কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছি না, এটি একটি মাথা ব্যাথা। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ গরু পাচারের সময় বার বার গরু আটক হচ্ছে। এটি নিয়ে অনেক অবৈধ গরু ব্যবসায়ী আমার উপর ক্ষিপ্ত। তাছাড়া গরুকে কেন্দ্র করে বিশাল একটি সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি করছে। আমার জন্য সেই চাঁদা বন্ধ হয়ে গেছে। মুলত এগুলোর ক্ষোভ প্রকাশের জন্য ছোট স্বাভাবিক বিষয়টাকে অস্বাভাবিক করছে সিন্ডিকেটরা।
ঘটনাটি দু:খ জনক -এমন মন্তব্য করে বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে আলীকদমবাসীকে শান্ত থাকারও অনুরোধ করেন তিনি।
পাঠকের মতামত: